Thursday, 22nd May, 2025
Thursday, 22nd May, 2025

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর: এত সুবিধায়ও গতি ধীর

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর: এত সুবিধায়ও গতি ধীর

চট্টগ্রাম ও ফেনীর তিন উপজেলার ৩৩ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। ভূমি উন্নয়ন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগসহ নানা কাজ চলছে সেখানে
চট্টগ্রাম ও ফেনীর তিন উপজেলার ৩৩ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। ভূমি উন্নয়ন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগসহ নানা কাজ চলছে সেখানে।t ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৩৩ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। পূর্ণাঙ্গ রূপ পেলে এখানে কর্মসংস্থান হবে ১৫ লাখ মানুষের। ৩০টি জোনে বিভক্ত এই শিল্পনগরের ব্যাপ্তি দৃষ্টিসীমায় ধরে না। সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, ভূমি উন্নয়ন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, মাটি ভরাট এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগের কাজ চলছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এসব উন্নয়নকাজ করছে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্মার্ট শিল্পনগর গড়ার লক্ষ্য নিয়ে।
এই শিল্পনগরে ‘এ’ থেকে ‘এল’ পর্যন্ত ১২টি ব্লক থাকলেও আপাতত ‘এফ’ ব্লকে হালকা ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের জন্য রাস্তা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগ এবং অন্যান্য সুবিধা করে দিয়েছে বেজা। এখানে বিনিয়োগকারীদের ১০ বছরের জন্য শতভাগ আয়কর ছাড় এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি ব্যবহারের ওপর ৮০ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
বেজা সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি প্রায় ১৫০ প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন শুরু করেছে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান। ছয় মাসের মধ্যে আরও চারটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে আসতে পারে। আয়কর ও শুল্ক খাতে এত ছাড় দিয়ে অবকাঠামো গড়ে দেওয়া সত্ত্বেও অনেক প্রতিষ্ঠান কারখানা না বানিয়ে প্লট ফেলে রেখেছে। প্লট বরাদ্দ নিয়ে যথাযথ কারণ ছাড়াই নির্ধারিত সময়ে কারখানা না করায় এসিআই ও অনন্ত অ্যাপারেলসের বরাদ্দ বাতিল করেছে বেজা।

এ বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘প্লট নিয়ে বিনিয়োগ না করে অনেকেই ফেলে রেখেছে। এ রকম অনেককেই আমরা চিহ্নিত করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্লট নিয়ে বিনিয়োগ না করায় এসিআইসহ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ বাতিল করে দিয়েছি।’

কারখানা বানাচ্ছে ১৩ প্রতিষ্ঠান এই শিল্পনগরে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। বেজার মহাপরিকল্পনা অনুসারে, এটি পুরোপুরি চালু হবে ২০৪০ সাল নাগাদ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে তিনটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। বেজার তথ্যমতে, এই শিল্পনগরে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৭৮৩ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। তবে এ পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে ১০২ কোটি ডলার। বেজার আশা, ২০২৭ সালের মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হবে। এর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে ৫০০ কোটি ডলার। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাপানের নিপ্পন, ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, যুক্তরাজ্যের বার্জার পেইন্টস, সিঙ্গাপুরের উইলমার। দেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লখযোগ্য পিএইচপি, বসুন্ধরা গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ১৩টি প্রতিষ্ঠান কারখানা স্থাপনের কাজ করছে। প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে আরও ১৫টি কোম্পানি।

উৎপাদন শুরু চার প্রতিষ্ঠানের এ পর্যন্ত চারটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে নিপ্পন, এশিয়ান পেইন্টস, ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং টি কে গ্রুপের সামুদা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে। জাপানের নিপ্পন ও বাংলাদেশের ম্যাকডোনাল্ড যৌথভাবে বিনিয়োগ করেছে দেড় কোটি ডলার। তারা স্টিলের বিভিন্ন সামগ্রী বানায়। ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আলাদাভাবেও সেতু, ভবন ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য স্টিলের সামগ্রী বানাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির বিপরীতে সাড়ে তিন কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। কর্মসংস্থান হয়েছে ৩৫০ জনের। সামুদা কনস্ট্রাকশন ৯১ লাখ ৬০ হাজার ডলার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে বিনিয়োগ করেছে ৮২ লাখ ডলার।

আরও চার প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে আসছে
বেজা জানায়, ছয় মাসের মধ্যে উৎপাদনে আসবে ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, এস কিউ ইলেকট্রনিকস লিমিটেড, বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং মডার্ন সিনটেক্স। কর্মসংস্থান হবে ২ হাজার ৭০০ লোকের।

ম্যারিকোর লিগ্যাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর রাশেদ বিন এহসান বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডে ব্যবসা সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখবে। ম্যারিকো মিরসরাই অর্থনৈতিক জোনে তৃতীয় কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। কাজে ভালোই অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই উৎপাদনে যেতে পারব।’ তিনি আরও বলেন ‘এখানকার উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিও করা হবে। আমাদের পরিকল্পনা আছে কারখানা আরও সম্প্রসারণ করার।’
মডার্ন সিনটেক্সের জেনারেল ম্যানেজার সফল বড়ুয়া বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য ছিল এপ্রিলে উৎপাদনে আসার। এখন জুলাইয়ে উৎপাদনে আসার সব কার্যক্রম শেষ করে আনা হচ্ছে। ১৩১ মিলিয়ন (১৩ কোটি ১০ লাখ) ডলারের কাছাকাছি বিনিয়োগ করেছি। প্রায় ১ হাজার ২০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে।’

এলাকাবাসীর ক্ষোভ মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনীর মানুষের আশা ছিল, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর তাদের ভাগ্য বদলে দেবে। তবে কারখানা স্থাপনে ধীরগতিতে কর্মসংস্থান ব্যাহত হওয়ায় সে আশায় ভাটা পড়েছে। মিরসরাইয়ের উপজেলা চেয়ারম্যান জসীম উদ্দীন বলেন, ‘শিল্পনগর করতে গিয়ে আমার উপজেলার অনেকের জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। ফলে যারা আগে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করত, এখন তারা বেকার। চাকরি না হওয়ায় এল

সংবাদটি লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন