Thursday, 22nd May, 2025
Thursday, 22nd May, 2025

পদ্মা সেতু খুলছে আগামী মাসে,এমন খবরে উৎফুল্ল দক্ষিনের মানুষ আসছেন জাজিরা প্রান্তে

শরীয়তপুর পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত আছে। আগামী জুনে সেতুটি জনসাধারনের ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে এমন খবর চাউর ছিল বেশ কিছু দিন থেকে। বুধবার সেটি আরো সুনির্দিষ্ট করে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এমন ঘোষনার পর থেকেই দীর্ঘ প্রতিক্ষিত সেতুটির জন্য দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ উচ্ছাসিত ও উৎফুল্ল। দক্ষিনের বিভিন্ন জেলার মানুষ প্রতিদিনই সেতুর বিভিন্ন অবকাঠামো দেখতে সেতুর জাজিরা প্রান্তে আসছেন। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান,গত মাসে সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ,বাতি বসানোর কাজ (ল্যাম্পপোষ্ট) শেষ হয়েছে। এখন তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কাজ চলছে। এ ছারা সেতুতে সাইন, সংকেত ও মার্কিং বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেতুর সীমানাদেয়ালের ওপর স্টিলের রেলিং বসানোর কাজ চলছে। সেতুর আগেই দুই প্রান্তে নির্মান করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। ১০ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কটি ২০১৭ সালে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। যার মধ্যে জাজিরা প্রান্তেই ১০ কিলোমিটার। দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ পাঁচ বছর যাবৎ ওই সংযোগ সড়ক ব্যবহার করে নৌপথে ঢাকা যাতায়াত করছে। আর নদী শাসন কাজও প্রায় শেষ প্রান্তে। জাজিরার নাওডোবা হতে শিবচরের মাদবরচর পর্যন্ত ০০০ কিলোমিটার নদী শাসন এলাকা এখন দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র। খুব কাছ থেকে সেতু দেখার জন্য সেখানে প্রতি দিন শতশত মানুষ ভির করছেন। ঝালকাঠি জেলা শহরের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শনিবার বিকালে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে এসেছেন। ভাংগার এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের ওপর দিয়ে নাওডোবায় টোলপ্লাজার সামনে আসেন। নিরাপত্তার কারনে সামনে এগুতে পারেন নি। সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে পদ্মার তীরে নদী শাসন এলাকায় যান। সাইফুল ইসলাম বলেন,আমরা আজ আনন্দিত এটা ভেবে দেড় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পদ্মার বুকে গাড়ি চালাব। আমাদের জীবন-যাপনে বড় একটি প্রতিবন্ধকতা ছিল পদ্মা নদী। তাতে সেতু হবে,সেই সেতুর কারনে অর্থনীতে সমুদ্ধি আসবে ১০-১২ বছর আগেও তা ছিল কল্পনাতিত। সকল বাধা অতিক্রম করে এখন আমরা শুভ সময়ের ক্ষন গননা করছি। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তিনি সহকর্মিদের সাথে পদ্মা সেতু দেখতে শনিবার জাজিরায় এসেছিলেন। তিনি বলেন,বেশ কিছুদিন থেকে শুনছিলাম জুনে পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হবে । আবার শুনলাম বছরের শেষে সেতু চালু করা হবে। আমরা দ্বিধায় পরে যাই। সরকারে শীর্ষ ব্যক্তির মুখে জুনে সেতু খুলে দেয়ার খবর শুনে উচ্ছাসিত হয়েছি। আমাদের ভোগান্তির অবসান হচ্ছে। সেতু ব্যবহার করে ৪ হতে ৫ ঘন্টায় সড়ক পথে ঢাকা যেতে পারব এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কি হতে পারে। পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪১ কোটি টাকার মতো। এপ্রিল মাসের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৯৮ শতাংশ। নদী শাসনের কাজের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে পদ্মা সেতু। এ সেতুর মাধ্যমে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু। সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। জানতে চাইলে শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন,পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সম্মানের ও গৌরবের একটি অবকাঠামো। আমরা দক্ষিনের মানুষ সোনালী সেতুর জন্য শ্যামল ভুমিতে অধির আগ্রহে আছি। জুনে সেতু খুলে দেয়ার খবরে আমরা উচ্ছাসিত। সেতুটি চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-যাপন ও অর্থনীতে বিরাট পরিবর্তন আসবে।
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী, একে এম এনামুল হক শামীম বলেন , সকল সড়জন্ত ধুলিসাধ করে মাননিয় প্রধান মন্ত্রী এদেশের জনগনের সহযোগীতায় পদ্মা সেতু নির্মানে অন্যঅন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছে।তাই জনগনের ভোটে আবার এ সরকার ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি পদ্মা সেতু নিয়ে খেলতে চেয়েছিল কিন্ত সেইখানে ও ব্যার্থ হয়েছে। বিএনপি এনখন জন শুন্য। তাই তাদের আন্দোলন প্রত্যাখান করেছে জনগন। সময়ের অপেক্ষা পদ্মা সেতু দিয়ে জানবাহন পাড়াপাড়ের। জুন মাসেই পদ্মা সেতুর উদ্ধোধন করবেন মানবতার মা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংবাদটি লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন