Friday, 23rd May, 2025
Friday, 23rd May, 2025

শরীয়তপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী । শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধী ,আতঙ্কে মানুষ

শরীয়তপুরে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী আক্রান্তের সংখ্যা! আগে জেলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও এখন এর প্রকোপ বেড়েছে উপজেলার হাসপাতালগুলোতেও। জেলায় প্রতিদিন পরিক্ষা করে ডেঙ্গু সনাক্ত হচ্ছে ২০-২৫ জনের মত, একদিনে ভর্তি হচ্ছে ৯- ১০জনেরও বেশি।

শনিবার(১৫ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত— গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ জন ।আজ শনিবার ১৭ জন সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তী রয়েছে। শরীয়পুর জেলায় এখন মোট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪০ জন।

আক্রান্তরা বেশির ভাগই ঢাকায় ছিলেন। এদিকে এডিস মশার আতঙ্কে পৌর এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার পাশাপাশি খানাখন্দ ও ডোবায় জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের দাবি জানিয়েছে পৌরবাসী।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলায় প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ নিয়ে বিভিন্ন বয়সী রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্য অর্ধেকের বেশি রোগী সদর পৌরসভার বাসিন্দা। এজন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট খোলা হয়েছে। আক্রান্ত হওয়া অধিকাংশ রোগী ঢাকা থেকে আসা। সদর হাসপাতালে গত ১৯ জুন থেকে এ পর্যন্ত ৪০ জন রোগী ভর্তি ছিল। এর আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৪ জন। এখন এখানে ১৬ জন ভর্তি রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন অন্তত ১০ জনের ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হচ্ছে। এদিকে, শরীয়তপুর সদর পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতামূলক মাইকিং প্রচারনা করা হচ্ছে মাঝে মাঝে।

শরীয়তপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবছর এখন পর্যন্ত শরীয়তপুর সদরসহ ছয়টি উপজেলায় ৯৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।এর মধ্যে শরীয়তপুর জেলা হাসপাতালে ৫৬ জন ডেঙগু ভর্তী হয়েছে। শনিবার জলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ১৭ জন বাকি রোগী চিকিৎসা সেবানিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। উপজেলা হাসপাতালে আজ ২৩ জন ভর্তি রয়েছেন। বলে হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে। তবে এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৭ জন। এছাড়া বর্তমানে ভর্তি আছেন ৪০ জন।

এরমধ্যে, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। ভেদরগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিল৷ যার মধ্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৩ জন। এখন সেখানে ভর্তি রয়েছে ১১ জন।আর উপজেলাটিতে পরিক্ষা করে প্রতিদিন প্রায় ১৫ জনের ভিতরে ডেঙ্গু সনাক্ত হচ্ছে। তাছাড়া গোসাইরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে।ডামুড্যা উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন ৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এখানে মোট ১১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। এছাড়া নড়িয়া ও জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খুব কম ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হচ্ছে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগী আল আমিন বলেন, আমি ঢাকার গাজিপুরের একটি কোম্পানিকে চাকরি করি। ঈদে বাড়ি বেড়াতর এসেই ঈদের তিনদিন পরেই শরীরটা বেথা ও জ্বর জ্বর অনুভব করি। পরে হাসপাতালে এসে পরিক্ষা করে দেখি ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে।তাই ডাক্তারের পরামর্শে এখানে ভর্তি রয়েছি।

ভেদরগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মিনি বেগম বলেন, আমি একজন গৃহিণী। আমার আজকে তিনদিন হয় জ্বর। তাই হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখাই। পরে ডাক্তার পরিক্ষা করে দেখেন ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। তাই এখানে ভর্তি রয়েছি। ডেঙ্গু জ্বর অনেক ভয়াবহ, নিজের না হলে বোঝতাম না।

শরীয়তপুর সদর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান জন বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে এলাকায় নিয়মিত ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করার নিয়ম প্রচার প্রচারণা করা হচ্ছে। আর মশা নিধনের ঔষধ ও ব্যবহার করা হচ্ছে। সকলে মিলে এডিস মশা নিধনের জন্য নিয়ম মেনে চললে শহরে ডেঙ্গু রোগ কমবে বলে আমি মনে করি।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড.হাসান ইবনে আমিন বলেন, আক্রান্তের মধ্যে অনেকেই ঢাকায় চাকরি করেন। আবার অনেকেই বেড়াতে বা কোনো কাজে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। ঈদের পর হাসপাতালটিতে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। একজনের ডেঙ্গু ধরা পরার পর তার কিডনিতে সমস্যার কারনে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। আবার কেউকেউ বাড়িতে থেকে ঔষধ সেবন করছে। তাদেরকে বিশেষ করে বাসাবাড়িতে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।

শরীয়তপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ্ পরান বলেন, ঈদের আগে তেমন একটা বেশি ডেঙ্গু রোগে কেউ আক্রান্ত হয়নি। ঈদের পর থেকেই জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জেলা ছয়টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কম বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। তবে সদর ও ভেদরগঞ্জ উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা একটু বেড়েছে।তাছাড়া বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা জন্মাতে না পারে সেদিনে সবার খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে এ রোগকে প্রতিহত করা সম্ভব।

সংবাদটি লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন