
রাজবাড়ীতে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আরো ৩ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রবিবার দুপুরে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার জি.এম আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের বিকয়া গ্রামের মো. মাহফুজ মন্ডল (২১), পাংশা উপজেলার বিকয়া গ্রামের রবিউল খান (২১), হাকিম মন্ডল (২০) ও আশুরহাট গ্রামের হাসিব খান (১৯)।
জানা গেছে, গত ১৭ জুলাই দুপুরে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার পাতুরিয়া গ্রামে ফজলু মন্ডলের পাট ক্ষেত থেকে একটি অজ্ঞাত মরদেহের মাথার খুলি, চুল ও হাড়সহ দেহের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই পাটক্ষেত থেকে ভ্যানেটি ব্যাগ, পায়ের সেন্ডেল, পরিহিত জামা ও ওড়না দেখে তাকে শনাক্ত করা হয় জান্নাতুলকে। নিহত নারী আবুল কাশেম ব্যাপারীর ছোট মেয়ে জান্নাতুল নেছা (১৯) বলে জানা যায়। গত ৫ জুলাই দিবাগত রাতে বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে নিখোঁজ হয় জান্নাতুল। পরে নিহতের মা বাদী হয়ে কালুখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার প্রেক্ষিতে গত ৮ আগস্ট (মঙ্গলবার) কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের বিকয়া গ্রাম থেকে মো. মাহফুজ মন্ডলকে (২১) গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর থেকে অভিযান পরিচালনা করে শনিবার রাতের রবিউল খান (২১), হাকিম মন্ডল (২০) ও হাসিব খানকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়। সবাই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন করে দাবি পুলিশের।
পুলিশ সুপার জি. এম. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৪ বছর আগে বালিয়াকান্দি উপজেলার জসিম ব্যাপারীর ছেলে কুদ্দুস ব্যাপারীর সাথে বিয়ে হয় জান্নাতুলের। বিয়ের ৩ বছর পর বিচ্ছেদ হয় তাদের। এরপর থেকে সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন জান্নাতুল। গত ৩ জুলাই মাহফুজ মন্ডলের সাথে জান্নাতুলের ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় জান্নাতুল। গত ৫ জুলাই রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির সামনের রাস্তায় আসনে জান্নাতুল। সেখানে অপেক্ষা করতে থাকেন মাহফুজ ও তার বন্ধুরা। সেখানে অপেক্ষায় থাকা মাহফুজকে দেখে পছন্দ হয়নি জান্নাতুলের। তখন মাহফুজের বন্ধু রবিউল জানান, ম্যাসেঞ্জারে তিনি কথা বলেছেন। বাকি সবাই তার বন্ধু। সবাই তার বিয়েতে সহায়তা করবেন। পরে নির্জন একটি স্থানে নিয়ে যায় রবিউল। এরপর তাকে সবাই মিলে জান্নাতুলকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি নিয়ে তিনি থানায় মামলা করবেন বলে হুমকি দেয়। ধর্ষণ মামলা থেকে বাঁচতে শ্বাসরোধ করে জান্নাতুলকে হত্যা করা হয়।
সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার বলেন, আমরা তদন্ত করতে গিয়ে হতবাক হয়েছি। অবশেষে আমাদের পুলিশ এই তদন্তকাজ সফলভাবে শেষ করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন জমা দিবেন বলে জানান পুলিশ সুপার।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. সালাহউদ্দীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্), সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহা, কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রাণবন্ধু বিশ্বাসসহ জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।